Our Founding Members
Naresh Mitra (Actor)
First PresidentChhabi Biswas (Actor)
FounderBhanu Bandopadhyay (Actor)
FounderShyam Laha (Actor)
FounderKamal Mitra (Actor)
FounderSunanda Banerjee (Actor)
FounderKanan Debi (Actor)
Founder
About Us
"অভিনেতৃ সংঘের আত্মকথা"- সাল ১৯৩২, সবে বাংলা সিনেমা নির্বাক থেকে সবাক হওয়ার খবর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের কানে পৌছায়। কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে ২৪-পরগনা জেলার টালিগঞ্জ সবুজ শীতল গ্রামে হাজির হতে থাকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পরা। লোকাচারে কথিত আছে টালিগঞ্জ একদা সুন্দরবনের এক অংশ যা -আজ সিনেমা নির্মাণের পীঠস্থান। ওই সময় থেকে সবাক সিনেমা তৈরির সলতে পাকাতে শুরু করলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক হীরালাল সেন। শুরু হয় সবাক সিনেমা নির্মাণের বিপ্লব। পরবর্তীতে ঐ বিপ্লবে সামিল হলেন শ্রদ্ধেয় চিএ পরিচালক দেবকি কুমার বসু ও বি এন সরকার যিনি নিউ থিয়েটারের প্রান পুরুষ।
অভাবনীয় ভাবে সিনেমায় নেতৃত্বে দিতে এগিয়ে এলেন কানন দেবী, প্রমোথেশ বড়ুয়া, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ী সান্যাল, কমল মিত্র, সুনন্দা দেবী, কৃঋ চন্দ্র দে, কে এল সাইগল প্রমুখ এবং লাহোর ও পেশোয়ার থেকে এলেন পৃথ্বীরাজ কাপুর ও তাঁর সন্তানগন এবং দিলীপ কুমার। তখন খ্যাত বিখ্যাত শিল্পী দের আগমনে সিনেমা নির্মানের সরগরম এক চরম উত্থান, ঠিক ঐ মুহূর্তে দেখা দিল এক বিভীষিকাময় বিপর্যয় - শুরু হলো "দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ "! থমকে গেল সমস্ত সিনেমার শুটিং এর কাজ।
History

তারপর শুরু হ'ল ১৯৪২ এর " ভারত ছাড়ো আন্দোলন "। এই অস্থিরতা ১৯৪৬ সালের শেষের দিক পর্যন্ত সামিল ছিল। অবশেষে ভারত স্বাধীন হ'ল। এক নতুন স্থিতাবস্থায় পথ চলা শুরু হ'ল টালিগঞ্জের সিনেমা নির্মাণের কাজ। পাশাপাশি এক নতুন জোয়ারে হাতিবাগান পাড়ায় নটকে শিল্পীদের মাতোয়ারা। পেশাদারি নাটক মানুষের হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তৎকালীন সময়ে সিনেমা ও নাট্য শিল্পীদের অভিনয় শেষে একটু আড্ডা ও বিনোদনের সুযোগ দিয়েছিলেন হাজরা মোড়ের "বসুশ্রী" সীনেমা হলর কর্নধার শ্রী মনটু বসু। শিল্পীদের এত বিনোদনের পরেও সমাজ, শিল্পীদের নেতিবাচক চোখেই দেখতেন। শিল্পীদের মধ্যে, ভূত ভবিষ্যৎ এর ভাবনায় মন কষ্ট ছিল সবারই - বিশেষ করে ছবি বিশ্বাস এর মধ্যে। প্রসঙ্গত এক আড্ডায়, ভানু বন্দোপাধ্যায় শিল্পীদের নিয়ে এক সংগঠন করার প্রস্তাব দিলেন।
ছবি বাবু আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে সংগঠন করার কাজ শুরু করে দিলেন। ছবি বাবু বললেন- অভিনয়কে নেতৃত্বে দিই আমারা শিল্পরা, তাই এই সংগঠনের নামকরন হোক " অভিনেতৃ সংঘ " । ঐ নাম নিয়েই শুরু হ'ল, সিনেমা ও থিয়েটার তারকাদের জোটবদ্ধ সংগঠনের কাজ। অনেক শিল্পীও সাধারণ মানুষেরা জানতেন না যে - ছবি বিশ্বাস শুধু অভিনেতাই ছিলেন না, অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ছবি আঁকাতেও খুবই পারদর্শী ছিলেন। অভিনেতৃ সংঘের লোগো টা ছবি বাবুর আঁকা যা আজও ইতিহাসের সাক্ষর হয়ে আছে। সংঘের কাজে অফিসের খোঁজ শুরু হ'ল - সেটাও সহজেই জোগাড় হ'ল। সালটা ১৯৫০-৫১ , সরকারি রেজিষ্টার করার যাবতীয় কাগজপত্র ও আবেদন জমা পড়লো।
১৯৫২ সালে "অভিনেতৃ সংঘ" সরকারি রেজিষ্ট্রেশনের সিলমোহরে পেলো - এবং এই সংগঠন ভারতের প্রথম সিনেমা ও নাট্য শিল্পীদের সংগঠন, যা আজও অব্যাহত। শুরু হ'ল সংঘের শিল্পীদের সিনেমার শুটিং ও পাশাপাশি নাটকের মহড়া। সংঘের মঞ্চস্থ যে সব নাটক উপস্থাপনা হয়েছিল তার মধ্যে জনপ্রিয় নাটক মিশর কুমারী, শাজাহান, চরিত্র হীন, বিজয়া, আলিবাবা, কেদার রাজা, আদর্শ হিন্দু হোটেল, সত্য মারা গেছে, মুক্তির ডাক, দালিয়া, বন্যা, অনধোযুগ, বিদেহী, মুক্তির উপায়, হঠাৎ নবাব, ক্রুশবিদ্ধ কুবা, রাজকুমার, বিশেজুন, ফেরারী ফৌজ, অপুর পৃথিবী, বিল্বমঙ্গল এবং সৌদামিনী সারা বাংলায় প্রদর্শন করে মানুষের আকৃষ্ট অর্জন করে।
সংঘের সব কার্যক্রম পরিচালনা "পঞ্চপাণ্ডব" এর নাম শিল্পী মহলে সবার মুখে মুখে ঘুরতো। ঐ পাঁচজন ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ রায়, অনুপ কুমার, সতীনদ্র ভট্টাচার্য ও শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়। অভিনয়ের পাশাপাশি সামাজিকতার ভাবনাও কম ছিল না অভিনেতৃ সংঘের। ১৯৫৪ সালে ৪ঠা সেপ্টেম্বর মাননীয় মহামান্য রাজ্যপাল মহাশয়ের "যক্ষ্মা আরগ্য নিকেতনের" সাহায্যের হাত বাড়িয়ে " ভেটারেন - বানাম- অভিনেতৃ সংঘের প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচ খেলা হয় এবং ঐ সংগৃহীত অর্থ মহামান্য রাজ্যপালের তহবিলে প্রদান করা হয়। দুস্থ শিল্পীদের মেয়ের বিয়ে,সন্তানের লেখা পড়া ও চিকিৎসার বাবদ ও অর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। বন্যা ও খরার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বহুবার সংঘের তারকা শিল্পরা পথে নেমে অর্থ সংগ্ৰহ করে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়াও এখনো সংঘের অনুমোদনের মাধ্যমে বৃদ্ধ ও দুস্থ শিল্পীদের মাসিক ভাতা কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে প্রাপ্ত হয় - যা আজও অব্যাহত। সংঘের প্রযোজনায় ১৯৮২ সালে অভিনেতা দিলীপ রায়ের পরিচালনায় "অমৃত কুম্ভের সন্ধানে" কাহিনী ঢিত্র মুক্তি পায় এবং রাষ্ট্রিয় পুরস্কার প্রাপ্ত হয় তৎসহ বিদেশের পর্তুগাল থেকে ও পুরস্কৃত হয়। এর দীর্ঘ দিন মাস বছর অতিক্রম হয়ে সিনেমা থিয়েটারে বিবর্তন ঘটেছে, তারই মধ্যে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন কে মেনে নিয়ে অভিনেতৃ সংঘের পথ এগিয়েই চলেছে। বাংলা সিনেমার সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে অভিনেতৃ সংঘের ৭০ বছর পূর্তি ও প্রান পুরুষ চলচ্চিত্র পরিচালক হীরা লাল সেনের স্মরণে ২৪ জুন ২০২২, সদস্যদের মধ্যে এক মিলন উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে "কালচক্র" পত্রিকার কর্নধার দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও মাধবী সেনগুপ্তের পুরভাগের আয়োজনে বিশিষ্ঠ খ্যাত নামা ব্যক্তি মহাশয়গনের উপস্থিতিতে ঐ মিলন উৎসবের পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়।
পরিসরে আনন্দের বিষয় এটাই যে -বিশ্ব বিখ্যাত জাদুকর পি সি সরকার (জুনিয়র)অভিনেতৃ সংঘের সভাপতি রূপে দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেছেন। ওনার দিশায় সংঘের সাংস্কৃতিকের অর এক নতুন ছন্দের রূপে র প্রকাশ ঘটবে আগামীতে।
অনুলিখন : সাধন তালুকদার ও শংকর মিত্র